Header Ads

Header ADS

মানবতার ভবিষ্যতের তিনটি দর্শন

মানবতার ভবিষ্যতের তিনটি দর্শনঃ

১.ডিস্টোপিয়ান(দুর্ভোগ ও অবিচার)এর ভবিষ্যৎ, যেখানে রয়েছ সমস্ত মানবজাতির দাসত্ত¡। যেহেতু মানুষের চেতনা পিষে গেছে সর্বাত্মক একটি শাষন ব্যবস্থার ভারে, যা মানুষকে আরও ছোট্ট যান্ত্রিক অংশে পরিণত করে একটি বিশাল প্রযুক্তিগত জঞ্জালভূমিতে।

২.সমানভাবে ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যৎ, যেখানে মানবতা দাসত্বযুক্ত তবে কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যম ব্যবহার করে শক্তিশালী পার্মাসিউটিক্যালসের সাথে, জনগনকে তাদের অবস্থা( দাসত্বকে) দেখায় স্বাধীনতা, পরিতোষ এবং পরমানন্দ হিসেবে।

৩.সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ংকর এটিই যেখানে মানব জাতির আর অস্তিত্ব নেই কারণ প্রযুক্তি অবশেষে মানব দেহ এমনকি মানুষের মনকেও অচল করে দিয়েছে। পুরুষ এবং মহিলাদের পরিবর্তে পৃথিবী রোবট, অ্যান্ডয়েড এবং শরীরবিহীন সাইবার-মানবে পরিপূর্ণ । আধুনিক বিশে^ আমাদের বর্তমান বাস্তবতা হলো এই ডিস্টোপিয়ান ফিউচারগুলোর মধ্যে একটি বা দুটি নয়, তিনটিই উপলদ্ধি করা।

আমাদের বলা হয়েছে যে চলতি বছরটি নিখুঁত হতে পারেনা কিন্তু এটি মানব ইতিহাসের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল। এর কারণ হলো মানবতা প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে : নিত্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, নিত্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, নিত্য নৈতিক অগ্রগতি  সর্বশেষ সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচারে বিজয়ী হতে মানবতা নতুন মানবাধিকার এবং নতুন স্বাধীনতা আবিষ্কার করেছে। মানুষ এখন ইতিহাসের যে কোন সময়ের তুলনায় সেরা এই কথাই আমাদের বলা হয়েছে কিন্তু বাস্তবতা কি ?

আধুনিক ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে চিন্তা করুন : জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আধুনিক মানুষ নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক বন্দি হিসেবে খুঁজে পায়। সে রাষ্ট্র পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহন করে(হাসপাতালে)। সে পৃথিবীতে আসা মাএ তাৎক্ষণিক ভাবে পেশাদারী চিকিৎসকের হস্তগত হয় এবং ওজন  পরিমাপ শেষে ইনজেকশন দেয়া হয় । দুই এক দিন পর সে হয়তো সেই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাবে তার মা একজন শক্তিশালী স্বাধীন মহিলা, যাকে বেচেঁ থাকার জন্য একটি নিষ্প্রাণ চাকরি করতে হয়। পরিসংখ্যানগতভাবে, খুব সম্ভবত তিনি একজন একাকী মা এবং নতুন শিশুকে সাহায্য করার মতো তার একজন স্বামী বা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ পরিবার নেই। তাই বাচ্চাকে ডে কেয়ারে যেতে হবে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে, দিনের বেশির ভাগ সময় ঘিরে রয়েছে পেশাদারী লোক। চার বছর বয়সে সে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে (ডে স্কুল) স্থানান্তরিত হয়, সে সঠিক ভাবে শিক্ষিত হচ্ছে। দৈনিক আট ঘন্টা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা করে সে রাষ্ট্রীয় নির্দেশিত পাঠ্যক্রমটি গিলতে থাকে, সেখানে সে শিক্ষা নিশ্চিত করে যেন একজন বাধ্য নাগরিক ও বাধ্য গ্রাহক হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে কলেজে যায়,তার পর বিশ^বিদ্যালয়ে যার কাজ তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, এই বিষয়ে যে  সে যেন চিন্তাভাবনা করে, সঠিক আদর্শে বিশ^াস করে।  ¯œাতক শেষে, সে মরিয়া হয়ে একটি কাজের সন্ধানের প্রতীক্ষা করে, যাতে সে দশ হাজার ডলারের শিক্ষাঋণ পরিশোধ করতে পারে। যদি সে তার পড়াশোনার অন্তর্ভুক্ত কোন কাজ খুঁজে না পায় তবুও সে সর্বদা নূন্যতম মজুরির বিনিময়ে ভৃত্যসুলভ কাজ পেয়ে যায়। যদি সে ভাগ্যবান হয় তবে সে জ্যাকপট জিতে, দাস হিসেবে কাজ করতে, কর্পোরেট ইঁদুর দৌড়ে অংশ নিতে পারে। প্রতিদিন সে নিজেকে বিছিানা থেকে টেনে নিয়ে যায়, কম্পিউটারের পিছনে বসে থাকে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। ক্লান্ত হয়ে ঘরে আসে, এতই ক্লান্ত যে ,সে কিছু কারার জন্য মানসিকভাবে অযোগ্য হয়ে পড়ে শুধু অর্ডার দেওয়া ও নেটফ্লিক্স দেখা ছাড়া। হতে পারে তার বিয়ে হয়েছে, হয়ত তার একটি বা দুটি বাচ্ছা আছে, আসলে এইসবে কী লাভ? কারণ তারা নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক অস্তিত্বের সাথে বন্দি,তাদের ক্ষুদ্র জীবনে জেগে থাকার অধিকাংশ সময়। সুতরাং সে এইভাবে কাজ করতে থাকে ৪০ বছর ধরে অবসর নেওয়া অবধি। সম্ভবত তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে সেই সময়ে তার বাচ্ছারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে তার জীবনের শেষটা হয়তো একা কাটাতে হবে,হয়তো কোন নার্সিংহোম বা বৃদ্ধাশ্রম হবে তাদের চূড়ান্ত প্রতিষ্ঠান! জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি, কার্যত তার জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত মধ্যস্থতা করেছিল একটি রাজ্য বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। বা সম্ভবত সে একাকী জীবনযাপন করবে এবং সে তার অ্যাপার্টমেন্টে মারা গেলে, কেউই জানতে পারবে না। তাকে দেখার মত কোন পরিবার বা আপনজন তার নেই এবং সে মারা গেলে এটি কয়েক মাস পরেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যখন তার পঁচা লাশের ক্রমবর্ধমান দুর্গন্ধ তার অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের হলগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং তার পর আবার কর্পোরেশনের লোকজন ডাকতে হয় আবশিষ্ট পঁচে যাওয়া শরীর হস্তান্তরের জন্য। এই দুঃখের অস্তিত্ব অস্বাভাবিক নয় কারন বস্তুবাদী প্রগতিশীল বিশ^ দর্শনের কাছে এটিই আসলে আদর্শ এটিই মডেল, এটি যৌক্তিক পরিণতি ডিজাইন করে। সর্বোপরি বস্তুবাদীদের মতে প্রকৃত সুখ প্রতিশ্রæতিবদ্ধ জান্নাতে পাওয়া যায় না, যাকে পরকাল কল্পনা করা হয়।  এই বিদ্যমান জীবন এবং বস্তুগত জিনিস গুলোই আমাদের সবকিছু । যেমন জীবনের প্রকৃত অর্থ হল শারীরিক আনন্দ সর্বাধিক করা এবং ব্যথা ও পরিশ্রম হ্রাস করা সর্বোত্তম উপায়, এই দর্শন অনুসারে মানুষকে আরো বেশী খাবার,আরও বেশি বিনোদন,আরও গ্যাজেট দিন,আরো বেশি প্রযুক্তি এবং আরো বেশি অটোমেশন তৈরী করুন যা জীবনকে আরো বেশি সুবিধাজনক করে তুলবে,আরো আরো এবং আরো সুবিধাজনক। লোকেরা যত বেশি পণ্য এবং পরিসেবাদি পাবে তত বেশি সুখি হবে,ততই স্বাধীন হবে। এই বছর আপনার সাধারন গাড়ি রয়েছে,পরের বছর গাড়ির চাহিদা আরো উন্নত হয়ে উঠবে এবং পরের বছর আরো বেশি উন্নত হবে এয়ারব্যাগ,বøুটুথ এবং জিপিএসের সাথে এবং আপনার অটো ড্রাইবিং কার না আসা অবধি চলতেই থাকবে। পণ্য আরো ভালো এবং প্রচুর পরিমানে থাকবে, এটিই অগ্রগতি! ক্লাসিক্যাল লিবারেল চিন্তাবিদ এবং প্রারম্ভিক অর্থনীতিবিদ,যেমন জন লক, জন স্টুয়ার্ট মিল,জেরেমি বেন্থাম এবং অ্যাডাম স্মিথের মতো লোক তারা সকলেই প্রগতিবাদী, তারা সকলেই একমত হয়েছিল যে মানুষের সুখ পণ্য এবং পরিষেবাদিতে আবদ্ধ এই রকম আরো পণ্য এবং পরিসেবা অবশেষে মানুষকে নিয়ে আসে স্বাধীনতা সাম্যতা এবং শেষ পর্যন্ত কল্পনার স্বর্গে। কমিউনিস্ট চিন্তাবিদরাও এর চেয়ে আলাদা ছিল না। বস্তুতঃ বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে কমিউনিজম সম্পূর্ণরুপে সম্মত হয় যে মানুষের সুখ এবং স্বাধীনতা কেবলমাএ আরো বেশি পণ্য এবং পরিসেবা থেকে আসে। কমিউনিস্ট কেবল তার উদারবাদী অংশের সাথে একমত নয়, কীভাবে অর্জন এবং বিতরণ করা যায় এই জিনিসপএ এবং পরিসেবা গুলো অন্তর্নিহিত এবং বস্তুবাদ একই রকম। অবিরাম ভোগ কি স্বাধীনতা এবং সুখের  দিকে পরিচালিত করে? অবশ্যই সুখের কিছু দিক ভোগের পরিভাষা রাখা যেতে পারে,যেমন খাদ্য,আশ্রয়, জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন সমূহ তবে বেশির ভাগ মানুষের সুখ ভোগ্যপণ্যের উপর নির্ভর করে না। একটি প্রেমময় এবং প্রতিশ্রæতিবদ্ধ সম্পর্ক থেকে বিপরীত লিঙ্গের সাথে যে সুখটি আসে,একটি প্রেমময় পরিবার এবং অনুগত সন্তানদের সাথে বৃদ্ধ হওয়ার পর যে সুখ আসে,অন্য মানুষের সাথে পরিচয় ভাগ করে নেওয়ার ফলে যে সুখ আসে, তা উচ্চতর উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষে। সুখের এই গভীর উৎসসমূহ শারীরিক আনন্দের অন্তর্ভূক্ত নয়,এদের প্রকৃতি ভোগবাদী নয়। এবং প্রকৃতপক্ষে,ভোগবাদী অর্থনীতি এই প্রাকৃতিক সম্পর্কগুলো দূর করতে এবং বিকল্প ব্যবস্থা দিয়ে তাদের বদলে দিতে  দুর্দান্ত কাজ করছে।তারা বলে  বিয়ের দায়িত্ব-কর্তব্যগুলো নিয়ে কেন দুশ্চিনÍাগ্রস্থ হতে হবে,যখন আপনি সুবিধা জনক যৌন অ্যাপ বা অনলাইনে পর্নোগ্রাফি ব্যবহার করতে পারেন,চিরকালের জন্য শারীরিক অভিলাষকে সন্তুষ্ট করেতে? কেন আপনার বাচ্চাদের লালনপালন করার বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তাগস্ত্র হবেন,যখন ডে-কেয়ার পরিষেবাদিতে তাদের ছেড়ে দেওয়া এত সহজ এবং সে ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের উচ্চাকাঙ্খাগুলোর সামাধান করা যায়? কেন আপনি ¯্রষ্টার সেবা করার এবং বিশ^স্ত সম্প্রদায়ের সাথে একএিত হওয়ার বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন, যখন আপনি শএুর মাঝে ডুবে যুক্তিসিদ্ধ আধ্যাত্মিকতা অনুভব করেন, চটকদার মোটিভেশনাল স্পিকারের মাধ্যমে,যাদের হলফনামা সরাসরি স্যোসালমিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়  যেটি আপনার হাতের মুঠোয়?। এটি ভোগবাদী প্রযুক্তির অংশ যা একটি আধুনিক সমাজ তৈরী করেছে যা আরো বেশি পরিমানে সচ্ছল,আরো স্বতন্ত্রবাদী কিন্তু শেষ পর্যন্ত আরো হতাশাগ্রস্থ, আরো অসুখী,আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এমন সব কিছু থেকে যা জীবনকে অমূল্য করে তোলে। মানুষের মন স্বাভাবিক ভাবেই এমন একটি কৃএিম অস্তিত্বকে পরিহার করে। একমাএ যে উপায়ে আধুনিক মানুষ বেচে থাকে তা হলো অবিরত ড্রাগ, অ্যালকোহল, ব্যাথানাশক ও হতাশা-প্রতিরোধক ড্রাগ সেবন,যা অনুভুতিকে অসাড় করে দেয়, এবং কখনো আতœহত্যার হার এবং অতিরিক্ত মাএার মাদক সেবনে মৃত্যুর ঘটনা বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে। আধুনিক নিরানন্দতা বাস্তবিক ভাবেই অনন্য,সম্ভবত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কথা হলো হ্যাপিনেস, ইনকাম,প্যারাডক্স। বস্তুবাদীদের বিপরীতে কথা আমাদের মতে  আয় বৃদ্ধি পেলে সুখ বৃদ্ধি পায় না। যখন সুখের মাএা এবং মাএা বিশে^র কয়েক ডজন দেশে দীর্ঘ সময় ধরে ট্র্যাক করা হয়,তখন এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে অতিরিক্ত বস্তুগত সম্পদ অতিরিক্ত সুখের সমান হয় না, তবে অন্যান্য গবেষণাগুলোতে একটি ভয়ংকর চিএ উঠে আসে: একবার মৌলিক চাহিদা পূরণের পরে একজন ব্যক্তির সুখ শান্তি তার সামাজিক পদ এবং পারস্পরিক অবস্থানের সাথে খুব সম্পর্কিত। অন্য কথায় অপনি অন্য লোকের তুলনায় কতটা ধনী। গবেষনায় দেখায় যে, আপেক্ষিক সম্পদ এবং তুলনামূলক মর্যাদা মানুষের সুখের স্তরে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। এই কারনে একজন মিলিয়নেয়ার তার সমস্ত সম্পদ থাকার সত্তে¦ও খুব অসুখী হতে পারে যদিও তার সামাজিক বৃত্তটি কোটিপতি দের দ্বারা পূর্ণ হয় এবং একজন বিলিয়নেয়ার খুব অসুখী হতে পারেন যদিও তার সামাজিক বৃত্তটি মেগা-বিলিয়নেয়ারে ভরা থাকে। এখানে প্যারাডক্সটি হল: একজন ব্যাক্তি অবিরাম তার সম্পদ বাড়িয়ে তুলতে পারে তবে যদি তার চারপাশের লোকেরা আরও দ্রæত তাদের সম্পদ বাড়িয়ে ফেলে  তবে অবশেষে সময়ের সাথে সাথে সে কম সুখি হয়ে উঠবে। এই ঘটনাটিকে উল্লেখ করা হয় আপেক্ষিক আয় হাইপোথিসিস গবেষকরা যা পেয়েছেন তা হল: এটি মানব প্রকৃতিরই একটি অংশ যে আশেপাশের লোকদের তুলনায় উচ্চতর মর্যাদা প্রাপ্ত লোকেরা স্বাভাবিক ভাবেই আত্মবিশ^াসী বোধ করেন, বেশি আতœবিশ^াস পান এবং বেশি সুখী হন। এমনকি প্রণিজগতেও এটি দেখা যায়। বিপরিতে,যারা নি¤œ সামাজিক মর্যাদার রয়েছে তাদের রয়েছে উচ্চ মাএার হতাশা, স্ট্রেস, বিড়ম্বনা এবং মানসিক অসুস্থতা। এটির বিশাল প্রভাব রয়েছে যে কি ভাবে আমরা সুখ এবং অর্থনীতির সংযোগটি বুঝতে পরি। মানুষের সুখ যদি এতটা ঘনিষ্ঠভাবে অবদ্ধ থাকে আপেক্ষিক মর্যাদার সাথে তবে ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান আধুনিক অর্থনীতি সুখের চেয়ে বেশি হতাশার উৎস। কেবলমাএ বর্ধমান সম্পদের ব্যবধানের বাস্তবতাটি বিবেচনা করুন, যেখানে বিশে^র ১% মানুষ বিশে^র ৫০% সম্পদের মালিক । ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানটি আধুনিক যুগে একেবারে নজিরবিহীন এবং আপেক্ষিক আয়ের হাইপোথিসিসের কারণে, এর অর্থ এটিও হয় যে,অসুখী ও হতাশার মাএাও নজিরবিহীন এবং প্রবাদতুল্য কাটা গায়ে নুনের ছিটা হল টিভি এবং স্যোশাল মিডিয়ার মত গণমাধ্যমগুলো প্রদর্শন করে ধনী ও বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনকে বিশদভাবে,যা কেবলমাএ আপেক্ষিক কষ্টের বোধকেই বাড়িয়ে তোলে ৯৯ শতাংশের মনে, এটি বিশ^ব্যাপী অসন্তুষ্টি এবং হতাশার দিকে পরিচালিত করে। এই প্যারাডক্সটি বিবেচনা করুন: উন্নয়নশীল দেশগুলির লোকেরা বিগত শতাব্দীতে প্রকৃত অর্থে ধনী হয়ে উঠেছে, তবে বাড়তি সম্পদ সত্তে¡ও তাদের সামগ্রিক সুখ হ্রাস পেয়েছে। কীভাবে তা হয়? এর কারণ তারা নিজেরা নিজেদের দরিদ্র হিসাবে অনুভব করে। কেন? কারণ একই শতাব্দীর পশ্চিমা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্বির তুলনায় তারা তুলনামূলক দরিদ্র। উদাহরণস্বরুপ, উপনিবেশবাদ এবং পুঁজিবাদ নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের এবং উন্নয়নশীল বিশ্বকে বস্তুগত দিক থেকে ধনী করে তুলেছে তবে উন্নয়নশীল বিশ্বের এই সমস্ত দেশের সামগ্রিক মানুষেরা নিজেদের দরিদ্র বোধ করে এবং কম আনন্দিত বোধ করে। কেন? কারন অতীতে তাদের সম্পদ ইউরোপের তুলনায় তুলনামূলক সমান বা তার চেয়েও বেশী ছিল। তাদের অতীতের চেয়ে এখন আরও নিরঙ্কুশ সম্পদ থাকার পরও পশ্চিমের তুলনায় তাদের আপেক্ষিক আবস্থান হ্রাস পেয়েছে। উপনিবেশবাদ অন্যান্য কারণে, পশ্চিমারা অনেক বেশি গতিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠল, একটি অদমনীয় সম্পদের ব্যবধান তৈরি করে। এই বৈশি^ক বৈষম্য প্রচুর কষ্ট, বিড়ম্বনা এবং হতাশার জন্ম দেয় দরিদ্র দেশগুলির জন্য এবং একইসাথে এটি ধনী দেশগুলির জন্য প্রচুর সুখ এবং তৃপ্তি তৈরী করে যারা অন্যের থেকে উর্ধ্বে থাকায় আরাম বোধ করে । কিন্তু ধনী ও দরিদ্র দেশগুলির মধ্যে সম্পদের ব্যবধান কি সত্যিই কি অদমনীয় নয়? উন্নয়নশীল দেশগুলি কি শেষ পর্যনÍ পশ্চিমাদের সমপর্যায়ে পৌছে সমান সম্পদ এবং মর্যাদা উপভোগ করতে পারবে না? একটি পুঁজিবাদী বিশ^ অর্থনীতি কি সবার জন্যে উম্মুক্ত কাজের ক্ষেএে সরবরাহ করছে না? সেন্দহাতীতভাবে উত্তরটি না! ইমানুয়েল ওয়ালারস্টাইন এবং থমাস পাইকেট্রির মতো তাত্তিকরা যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা হলো উদার পুঁজিবাদি মডেল কাঠামোগত বৈষম্যের জন্য দায়ী নয়। ১% জনসংখ্যার কাছে বিশে^র যে ৫০% সম্পদ রয়েছে যা ক্রমবর্ধমান, তা তাদের নিছক কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের কারণে নয় । গত কয়েক শতাব্দি ধরে পশ্চিমা দেশগুলির অত্যাধিক ধন-সম্পদ অর্জন এবং বিশে^র বাকি অংশে অত্যাধিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার কারণটি নিছক দক্ষতার কারণে নয়। বরং সুস্পষ্ট কাঠামোগত বৈষম্য রয়েছে, বিশ^ পুঁজিবাদে একটি শক্ত সীমারেখার মতো, যা অন্যান্য দেশগুলিকে পশ্চিমাদের সমপর্যায়ে পৌছাতে বাধা দেয়। সমাজবিজ্ঞানী ইম¥ানুয়েল ওয়ালারস্টেইন এই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যেহেতু প্রযুক্তিগত বিপ্লব পশ্চিমে শুরু হয় তাই তারা প্রচুর পরিমাণে মূলধন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল । সেই মূলধন ব্যবহার করে তারা গবেষনা ও উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিল: যা পরিচালনা করতো অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় আরও উদ্ভাবন,আরও ভাল পণ্য এবং আরও উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরিতে । অন্যান্য জাতি এটির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পরেনি, ফলে তারা একটি স্বল্প প্রযুক্তির অর্থনীতিতে আবদ্ধ হয়েছিল,পশ্চিমের তুলনায় যেখানে তারা নি¤œ-প্রাম্ভিক, নি¤œ প্রযুক্তির পন্য এবং কাচাঁমাল তৈরি করছে। এদিকে,পশ্চিমা দেশগুলি উন্নত ও উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য তৈরি করে এবং উচ্চতর মাএায় বিক্রি করে, আরও বেশি লাভ করে তারা আরও বেশি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারে,আরও উদ্ভাবন এবং এই জঘন্য চক্র চলতে থাকে। এটি একটি কাঠামোগত বৈষিম্য যা অন্য দেশগুলিকে সমপর্যায়ে আসতে বাধা দেয়। অগ্রগতি এবং নিত্য অর্থনৈতিক বিকাশের আধুনিক উন্নতি হলো আসলে একটি আধুনিক দুঃস্বপ্ন যা বিশে^র বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে চিরকালের জন্য নি¤œমানের অবস্থায় রাখে। মানবজাতির কি মুক্ত থাকার কথা নয়? সম্ভবত স্বাধীনতাই হলো এখানে আসল সমস্যা । অন্তহীন প্রযুক্তি এবং অন্তহীন ভোগের পুরো উদ্দেশ্যটি হলো আমাদের আরও বেশি বেশি স্বাধীনতা দেওয়া ।আমাদের পূর্বপুরুষদের অসুবিধে ও চিরস্থায়ী পরিশ্রমের জীবন আর নেই । এখন আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বেচেঁ থাকতে পারি আমাদের সকল প্রয়োজনের সাথে। খাদ্য,আশ্রয়, যৌনসহবাস, বিনোদন আক্ষরিক অর্থে সহজলভ্য আমাদের কাছে একটি বোতামে চাপ দেয়ার মতন এবং যদি এই কাজটিও খুব বেশি কঠিন হয় হবে কেবল কন্ঠস্বরের মাধ্যমেই আদেশ করা যায়।  তবে এটিও যথেষ্ট পরিমাণে ভাল নয়। এমনকি এটি যতটা সম্ভব সুবিধাজনকও নয়। কেমন হয় যদি মস্তিষ্কে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট স্থাপন করা যায়, যাতে আমরা আমাদের চিন্তা দিয়ে পিজ্জা অর্ডার করতে পারি? কিন্তু তার পরেও আমাদের খাবার চিবিয়ে খেতে হবে। বেশ একটি কাজ করা যায় ! তাহলে কি হয় যদি আমরা স¦য়ংক্রিয়ভাবে পিজ্জার পুষ্টি অনুপ্রবেশ করাতে পারি আমাদের দেহে এবং তারপরে পিজ্জা খাওয়ার অনুভূতিগুলো উপভোগ করতে পারি? তবে তার পরে, কেন কোনও বেটপ শরীরকে প্রথমেই আমাদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার অনুমতি দিব? প্রযুক্তিগত ভাবে কেন আমাদের দেহগুলিকে উন্নত করা যায় না বা আরো ভাল,আমাদের বোধশক্তি ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে আপলোড করে আমরা স্থায়ী সাইবারনেটিক সুখে খাকতে পারি। এটি কি স্বাধীনতার যৌক্তিক পরিণতি নয়? স্বাধীনতার পরিণতি তার পুর্ণ সম্ভাবনায় ? তবে অব্যশ্যই, এই স্বাধীনতাটির আসল অর্থ হল আর কোন মানবদেহ নেই এবং আর কোন মানবদেহ নেই এর অর্থ হলো উষ্ম আলিঙ্গনের আর কোন কোমল স্পর্শ থাকবে না, আর সূর্যাস্ত দেখা হবে না, বৃষ্টির ঘ্রাণ পাবে না, আপনার বাচ্চাদের আনন্দিত হাসি আর প্রকাশিত হবে না, আমরা যেমন জানি তেমন আর কোন মানবজীবন থাকবে না। এটাই মানব জাতির বিলুপ্তি । এছাড়া কি অন্য পথ আছে?


 


 


No comments

Powered by Blogger.